"বন্ধুর বিয়ে"
লিখেছেন লিখেছেন জিহর ১৬ মার্চ, ২০১৭, ০৪:০৮:২১ বিকাল
১.
আমরা সবাই কেমন যেন দিন দিন একে অন্যের থেকে পর হয়ে যাচ্ছি ...! যেখানে এক সময়ে আমরা একে অন্যের প্লেটের খাবার কেড়ে খেতাম...! আজ তার বিয়ের দাওয়াতে যেতে আমাদের সময় নেই..! সত্যি বলতে ছাত্র জীবন আর কর্ম জীবনের ফারাক'টা এবার আমার চোখে অনেক বড়ো হয়েই ধরা দিলো..!
২.
মাসুম ভাই আমাদের ক্লাসমেট, প্রথম ক্লাস ক্যাপ্টেন, বড়োভাই..! সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, সে আমাদের সতীর্থ বন্ধু, আত্মার আত্মীয়..! তার বিয়েতে আমাদের সহোপাঠিদের অনেক'কেই দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু মাত্র তিন জন সেখানে উপস্থিত হতে পারলাম..! মাসুম ভাইয়ের হৃদ্যতার কমতি তো ছিলো না, বরং আমাদের বন্ধুত্বের স্বল্পতাই এটার জন্য দায়ি ! যেখানে আজ কর্ম জীবনের দোহাই দিয়ে একে অন্যের খবর'টা নিতে পারি না..! সেখানে কারো বিয়েতে যবার প্রশ্নই ওঠে না...! এতোটাই যান্ত্রিক জীবন শুরু হয়ে গিয়েছে, মাত্র ৬ মাসেরর ব্যাবধানে..! হাসবো নাকি কাঁদবো...?
৩.
বিবাহিত জীবনের শুরুটা প্রত্যেক মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ববহ একটা মূহুর্ত..! বলতে গেলে মানুষের আরেক নব জন্মের নাম ম্যারেজ লাইফ..! তাই পরিবারের পাশাপাশি এসময়ে বন্ধুদের পক্ষ থেকে কিছু সাপর্ট না হলেই নয়..! কেননা শুধু পরিবারের সদস্যরা সব কিছু সামলে উঠা সহজ না! তাছাড়া এমন কিছু বিষয় আছে, যা বন্ধুরা ছাড়া অন্যদের মাধ্যমে সম্ভবও না..!
৪.
মাসুম ভাইয়ের বিয়েটা আমার দেখা সেরা বিয়ে গুলোর একটা..! এটা আমি বলতে বাধ্য..! তিনি পর্দানশিন আলেমা মেয়ে বিয়ে করেছেন..! ইসলামি কায়দা-কানুন রক্ষার সাথে সাথে সামাজিকতা ও রক্ষা হয়েছে ..! ড্যাগসেট ভাড়া হলেও তাতে বোজেছে গজল, ইসলামি সংগীত, এবং নির্বাচিত ওয়াজ..! বিয়ে হয়েছে কোনেদের মহল্লা মসজিদে ! জুমার নামাজবাদ আকদের পরে মসজিদে খেজুর ছেটানো হয় ! বরকতময় এই খেজুরের জন্য ছেলে বুড়োদের কাড়াকাড়ির সময়টাই আমার দেখা সবচেয়ে সেরা মূহুর্ত ! এক বাচ্চা তো খেজুর না পেয়ে সে কি কান্না.! পরে সবাই ওকে এতো খেজুর দিয়েছে যে, ও মুঠিতে রাখতে না পারার কারনে গেঞ্জিতে করে নিতে হয়েছিল ...
( বিঃদ্রঃ বিয়ের মজলিসে খেজুর ছেটানো সুন্নত এবং ইসলামি সংস্কৃতির অংশ )
.
বরযাত্রীর আনুষ্ঠানিকতায় প্রথমে হালকা একটু টুইস্ট মিসিং ছিলো..! কারন গেটের টাকা মুরব্বিরা আগেই দিয়েফেলেছিলেন..! বরযাত্রা শেষে আমরা সকাল সকাল ফিরে আসি..!
৫.
নতুন বর হওয়া সত্বেয় মাসুম ভাই আমাদের সাথে যথেষ্ট সময় দেন..! পরদিন বৌভাত অনুষ্ঠানে আমরা সক্রিয় ছিলাম খাবার পরিবেশনে এবং অন্যান্য কাজ গুলোর আঞ্জামে ! আমার দায়িত্ব ছিলো মেহমানদের হাদিয়া গুলো জমা করার..! শাকিল ভাই এবং সাজিদ ভাই সরাসরি খাবার পরিবেশনায় অংশ গ্রহন করেন..!
এরপর রিতি অনুযায়ী নব- দম্পতীর কোনেদের বাড়িতে প্রস্থান !
৬.
অনুষ্ঠান সমাপ্তির পর আমরা বিদায়ের প্রস্তুতি নেই..!
আমদের বিদায়কালে মাসুম ভাইয়ের পুরো পরিবার রাস্তায় চলে আসেন..! সবচেয়ে করুন দৃশ্য ছিল ঐ মূহুর্তটা..! তারা তো প্রথমে আমাদের কিছুতেই ছাড়বেন না..! কিন্তু আমাদের কর্মজীবনের ডাকে সাড়া দেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায়া নেই ! ফিরতে হবে আপন আপন ব্যাস্ত ভূবনে..!
তখন মাসুম ভাইয়ের বাবা আমাদের প্রাইভেটে কারের পাশাপাশি হাটছিলেন এবং কান্নাকাটি কাটি শুরু করেছিলেন..! গাড়ির গতি বাড়ার ফলে তিনি পিছে পড়ে গেলেন..! আমরা প্রত্যেকেই তার এই ভালোবাসা দেখে আবেগ-আপ্লুতো হয়েছি..! মাসুম ভাই শশুর বাড়ি থাকার ফলে আমাদের সাথে বিদায়ী সাক্ষাত হয়নি...! তাকে ফোন দিলে তিনিও কেঁদে ফেলেন..! এমনকি তার কান্নার ফলে কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল ..!
৭.
মাসুম ভাই আমাদের ৮ বছরেরর পুরোনো বন্ধুদের একজন..! তার বাবাকে আগে দেখলেও কথা হয়েছিল খুব সামান্য.! কিন্তু মাত্র ২৮ ঘন্টায় একজন মানুষ কতোটা কাছে আসলে এভাবে কাঁদতে পারে আমি বলতে পারব না...!
আমার গলা ধরে এসেছিলো...! কারন আমি বাবা হারিয়েছি আজ থেকে ১৩ বছর আগে..! বাবা কি জিনিস তা আমি একটু হলেও অনুভব করলাম মাসুম ভাইয়ের বাবার কাছ থেকে ।
৮.
আজ ফিরছি আবার ব্যাস্তময় জীবনে..! যেখানে নেই কোনো বন্ধুত্ব, নেই ভালোবাসা । জীবনের তাগিদে, ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় আমাদের বারবার ফিরতেই হবে এখানে...
(সমাপ্ত) লিখা : তালুকদার জহির
বিষয়: বিবিধ
১৮৪৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ এটা কি ইসলামী রীতির অংশ ?
০ বিয়ে হয় কনের বাড়িতে । সেখানে বর যায় । বিয়ের পর কনেকে বরের বাড়ি নিয়ে আসে । এবং ২/১ দিন পর ফিরানী হয় মানে বরকে কনে সহ কনের লোকেরা এসে কনের বাড়িতে নিয়ে যায় ।
ইসলামী রীতি কি এরকম ?
আপনাকে জানিয়ে রাখি যে, বিয়েতে সামাজিকতা ততোটুকু করা জায়েজ, যাতে পর্দার সমশ্যা না হয়, এবং ইসলামি শরিয়তের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়...!
এবং ঐ বিয়েতে এ জাতিয় কোন সমশ্যা হয়নি .!
আশা করি বুঝতে পারছেন...
সময় ডান হাত দেয়। ওনাকে বলেছিলাম,
আমাদের সংগঠনে যোগদানের জন্য। উনি পারফেক্ট মানুষ।www.islamisomaj.org
অনেক গুলো বানান ভুল আছে, প্লিজ ঠিক করে দিয়েন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন